Sunday, December 3, 2023

পিরের প্রতি মুরিদের আদব

মুর্শিদের প্রতি মুরীদের আদব 
পীর ও মুর্শিদের প্রতি মুরীদের আদবসমূহ: 

(১) আল্লামা মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রা:) বলেন, যার আদবের অভাব এবং আনানিয়াতের স্বভাব রয়েছে সে কখনো মূল উদ্দেশ্যে পৌছতে পারবে না।

 তরিকতে আদবের ভূমিকা অপরিসীম। আদবেই আউলিয়া হওয়া যায়। আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমী (রা:) আরো বলেন, বে-আদব মাহরুম গাশত আজ ফজলে রব অর্থাৎ যার আদব নেই সে আল্লাহর সকল প্রকার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত। (মসনবী শরীফ)

তাহলে যে যত বড় ইবাদতকারী হোক না কেন যদি আদব বিদ্যমান না থাকে তবে সে আল্লাহর সকল প্রকার দয়া, অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত থাকবে। সুতরাং বুঝা গেল ইবাদতের চেয়ে আদবের ক্ষমতা অনেকগুণ বেশি।

(২) মুজাদ্দিদ-ই আলফে সানী (রা:) স্বীয় মাকতুবাত শরীফে আদবের ব্যাপারে বলেন, মুরিদ সমস্ত দিক হতে তার মন ফিরিয়ে স্বীয় মুর্শিদের প্রতি মনস্থাপনা করা আবশ্যক।
(৩) এরূপ স্থানে দাঁড়াবে যেন স্বীয় শরীরের ছায়া পীরের ছায়ার উপর না পরে।
(৪) কখনো পীরের নামাজের মসলা (বিছানার) উপর পা রাখবে না।
(৫) তার পাত্রে কোন সময় অজু করবে না।
(৬) তার ব্যবহৃত পাত্র ব্যবহার করবে না।
(৭) তার সামনে অন্য কারো সাথে কথা বার্তায় লিপ্ত হবে না।
(৮) অন্য কারো প্রতি লক্ষ্য করবে না।
(৯) পীরের অসাক্ষাতে তিনি যেখানেই আছেন ঐ দিকে পা লম্বা করে বসবে না। সে দিকে থুথু ফেলবে না।
(১০) পীর হতে যা প্রকাশ হয় তা প্রকাশ্যভাবে তা খারাপ বিবেচনা হলেও ভালো মনে করতে হবে। যেহেতু তিনি যাহা করেন ইলহামের দ্বারাই করেন।

(১২) পীরের ধ্যান করতে হবে। রাবেতায়ে শায়খ মানে হলো পীর সাহেব যখন মুরীদ থেকে দূরে থাকেন। তখন মুরীদ তাজিম ও মহব্বতে তার গুনাবলীকে সামনে রেখে পীরের ধ্যান করলে তার সোহবতে থাকার ন্যায় ফয়েজ ও বরকত লাভ করতে সক্ষম হয়। (কওলিল জামিল কৃত, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রা:)

(১৩) পীরের প্রতি যার মহব্বত যত হবে তার সফলতাও তত বেশি হবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য এই পন্থাই সর্বোত্তম। অযোগ্য মুরীদ যখন পীরের সঙ্গে সীমাতিরীক্ত মহব্বতে বিভোর হয়ে পীরের ধ্যানে মগ্ন হয়ে পরে, তখন কামেল মুর্শিদ খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মুরীদের মধ্যে যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়ে থাকেন। (কওলুল জামিল)

(১৫) যত বেশি সম্ভব পীর মুর্শিদের সোহবত লাভের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কেননা, আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমী (রা:) বলেন, তুমি যদি আল্লাহর ওলীগণের দরবার হতে দূরে থাক, তাহলে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর দরবার হতে দূরে সরে গেলে। আল্লাহ তায়ালা পাক কুরআনে বলেন– اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত নেককারদের (ওলীদের) নিকটবর্তী।
(১৬) তাফসীরে কানজুল ঈমানে সূরা কাহাফের ৭০ নাম্বার আয়াতের টিকায় বলেন, মুর্শিদের প্রতি মুরীদ বা শিষ্যের আদব সমূহের মধ্যে একথাও অন্তর্ভূক্ত যে, সে মুর্শিদের কার্যাদির উপর অভিযোগের মুখ খুলবে না বরং একথার অপেক্ষায় থাকবে যে, তিনি সেটার হিকমত বা রহস্য প্রকাশ করবেন। (তাফসীরে মাদারিক ও আবুস সাউদ)

(১৭) আদবটি হলো, তুমি তোমার নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ পরিহার করবে। পীর কী চান বা কী পছন্দ করেন তা না জেনে মুরীদের কোন কাজই করার অনুমতি নেই চাই সেই কাজ হোক ধর্মীয় বা বৈষয়িক, আম (সার্বিক) কিংবা খাস (সুনির্দিষ্ট)। 
(১৮) আপন মুর্শিদ ব্যতিত অন্য কারো প্রতি মনোযোগী হবে না। সাধ্যমত স্বীয় জান ও মালের দ্বারা মুর্শিদের খেদমত করবে।
(১৯) মুর্শিদের কোন কাজ বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভুল বলে মনে হলেও তার কার্যকে সঠিক বলে মানতে হবে। কারণ তিনি তা বিশেষ কারণে আল্লাহর নির্দেশেই করে থাকেন।


(২০) মুর্শিদের কোন বিষয়ের প্রতি কোন প্রকার আপত্তি করবে না। এতে খোদার অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হবে ও মুরীদের প্রাপ্ত ফয়েজ বন্ধ হয়ে যায় এবং মুর্শিদের মনে যে আবরণ পতিত হয়। তাতে চিকিৎসাহীন বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়।
(২১) ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যাবতীয় বিষয়ে মুর্শিদের আদেশের অনুকরণ করবে।
(২২) তিনি যেভাবে ইবাদত করেন বা করতে বলেন, সেভাবেই করবে।
(২৩) তার কার্যকলাপ দেখে শরীয়তের মাসায়েল শিখবে।
(২৪) নিজ পীরের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারদেরকে পীরের হাত হিসাবে পীরের তুল্যই সম্মান করতে হবে। তাদের যোগ্যতা কামালিয়াতের বিচার করবে না।
(২৫) কখনো পীরের দোষত্রুটি অনুসন্ধান করবে না, যেহেতু সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ ব্যক্তি যে অলীগণের ত্রুটি অন্বেষণ করে।

(২৬) পীরের অনুমতি ব্যতিত তার নিকট হতে অন্যত্র যাবে না।
(২৭) প্রয়োজন ব্যতিত পীরের নিকট হতে বিদায় নিবে না।
(২৮) কথা বলার সময় পীরের আওয়াজের উপর মুরীদের আওয়াজকে উচ্চ করবে না। কারণ এটা নিতান্তই বেয়াদবী।
(২৯) আপন মুর্শিদের নিকট কখনও কোন কারামত দেখার আগ্রহী হবে না। যেহেতু কোন মুমিন কখনও খোদা প্রাপ্তি ব্যতীত কারামত প্রত্যাশী হয়নি।
(৩০) নিজের কারামত বা অলৌকিক শক্তি থাকলেও আপন মুর্শিদের সামনে কখনো তা প্রকাশ করবে না।
(৩১) মোরাকাবার মধ্যে কোন বিষয় অবগত হলে এবং ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করলে স্বীয় পীরের ব্যাখ্যা ব্যতীত অন্য কোন ব্যাখ্যা গ্রহণ করবে না।
(৩২) মুর্শিদ কাশফ দ্বারা মুরীদের অবস্থা অবগত হচ্ছেন। এই আশায় বসে না থেকে বরং নিজের অবস্থা মুর্শিদকে জানাবে।
(৩৩) মুরীদ নিজেকে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ও হীন মনে করবে।
(৩৪) কোন ফয়েজ বা অনুগ্রহ লাভ হলে তা পীরের বিশেষ তাওয়াজ্জুহ মনে করবে। যদি অন্য কোন পীর স্বপ্নযোগে ফয়েজ দান করেন, তাহলে তা আপন মুর্শিদ হতেই মনে করবে। কারণ মুর্শিদ মুরীদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন ছুরতে ফয়েজ প্রদান করে থাকেন।


(৩৬) কামেল পীরকে পরশমণি তুল্য জানিতে হইবে। তাহাকে যথেষ্ট ভাবিয়া তাহার হস্তে পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করবে, তাহার সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির মধ্যেই স্বীয় মঙ্গল অমঙ্গল জানিবে। নিজের যাবতীয় আকাঙ্খা তাহার ইচ্ছার অনুগত করিবে, যেন পীরের ইচ্ছার বিপরীত মুরীদের কোন স্পৃহা না থাকে। আদব সম্মান পালন করা আধ্যাত্মিক পথের অতি আবশ্যকীয় বস্তু অন্যথায় কোনই ফল ভাল হইবে না।
(৩৭) স্বীয় পীর ব্যতীত অন্য কোন পীরের প্রতি লক্ষ্য করিবে না।
(৩৮) পীর উপস্থিত থাকাকালীন তাহার অনুমতি ব্যতীত নফল ইবাদত ও জিকিরে লিপ্ত হইবে না।

(৪১) পীরের কোন বস্তু বা অন্য কোন দ্রব্য তাহার তাবারুক হিসাবে

No comments:

Post a Comment

redirect

https://www.effectivegatecpm.com/wweqf9q4a?key=11411235fc1ea1b18659fe0f01cf0520